22 C
Dhaka
Thursday, February 20, 2025

ভারতে পাঠ্যবই থেকে মুছে গেল বাবরি মসজিদের নাম

ভারতের ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এনসিইআরটি) প্রকাশিত দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ের পাঠ্যসূচি থেকে মুছে ফেলা হয়েছে বাবরি মসজিদের নাম। এনসিইআরটির দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে কিছু সংশোধন হচ্ছে তা আগেই খবর মিলেছিল। কিন্তু কী এবং কতটা সংশোধন হচ্ছে, তা আগে জানা যায়নি। সম্প্রতি নয়া সংস্করণের বই সামনে আসার পরই অযোধ্যার ইতিহাস সংশোধন করা হয়েছে বলে জানা গেলো। আগে যেখানে চারটি পাতায় অযোধ্যার ইতিহাস লিপিবদ্ধ ছিলো, বর্তমানে সেটিকে দুই পাতায় এনে ফেলেছে এনসিইআরটি। প্রতিষ্ঠানটির পাঠ্যক্রম মেনে চলে ভারতের সিবিএসই বোর্ড। দেশটির আইসিএসই এবং আইএসই বোর্ডও কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে। স্বাভাবিকভাবে এমন ঘটনায় দেশব্যাপী শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

জানা গেছে, গত সপ্তাহে বাজারে আসা দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইয়ের নয়া সংস্করণে মাত্র দুই পৃষ্ঠার মধ্যে যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে তাতে কোথাও বাবরি মসজিদের উল্লেখ নেই। কেবল বাবরি মসজিদকে ‘তিন গম্বুজ সম্বলিত নির্মাণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, গুজরাটের সোমনাথ থেকে অযোধ্যার উদ্দেশে যে রথযাত্রা বের করেছিল বিজেপি, তার কোনও উল্লেখ নেই বইয়ে। উল্লেখ নেই, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় করসেবকদের তাণ্ডবের। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে, তাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে সে সময় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়াসহ কিছুই আর নেই বইতে।

আরও পড়ুনঃ  সামরিক ঘাঁটিতে ইসরাইলের হামলা, কী বলল ইরান

আগের এনসিইআরটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাবরি মসজিদ ১৬ শতকে নির্মিত হয়েছে। মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু বইয়ের নয়া সংস্করণে, বাবরি মসজিদের নামই উল্লেখ করা হয়নি কোথাও। নতুন সংস্করণে লেখা হয়েছে, ১৫২৮ সালে শ্রী রামের জন্মস্থানে তিন গম্বুজ সম্বলিত একটি নির্মাণ গড়ে তোলা হয়েছিল, যেখানে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন প্রতীকচিহ্ন দৃশ্যমান ছিলো। কাঠামোর ভিতরে এবং বাইরে হিন্দু সৌধের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। বইয়ের আগের সংস্করণের বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং সংঘর্ষের উল্লেখ ছিলো। তবে নয়া সংস্করণে লেখা হয়েছে, অযোধ্যা নিয়ে বিজেপির আফসোসের অন্ত ছিল না।

আরও পড়ুনঃ  যে ভয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চাইছেন না মোদি?

পুরনো সংস্করণে লেখা ছিলো, ফৈজাবাদ আদালতের নির্দেশে ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবরি মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার পর দুই তরফেই গোলমাল দেখা দেয়। সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা, সাম্প্রদায়িক অশান্তি, করসেবকদের উন্মাদনা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং দাঙ্গার উল্লেখ ছিলো বইতে।

নয়া সংস্করণে লেখা হয়েছে, শ্রী রামের জন্মভূমিতে মন্দির ভেঙে তিন গম্বুজ সম্বলিত নির্মাণটি দাঁড় করানো হয় বলে বিশ্বাস জন্মায়। মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হওয়ার পরও নির্মাণের কাজ এগোয়নি। ফলে হিন্দুদের মনে ধারণা জন্মায়, রামজন্মভূমি নিয়ে তাদের আবেগকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, মুসলমানরা গোটা কাঠামোর উপর দখলদারি চেয়ে দাবি জানায়। তা নিয়ে দুই তরফে উত্তেজনা বাড়ে; আইনি টানাপোড়েন শুরু হয়। দীর্ঘদিনের এই বিবাদের নিষ্পত্তি চেয়েছিল দুই পক্ষই। ১৯৯২ সালে মসজিদের কাঠামোটি ধ্বংসের পর সমালোচকদের একাংশের মনে হয়েছিল, ভারতীয় গণতন্ত্রের নৈতিকতাই ঝুঁকির সম্মুখীন।

আরও পড়ুনঃ  শেখ মুজিব তার কৃতকর্মের করুণ পরিণতি ভোগ করেছেন: পাক প্রধানমন্ত্রী

২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা বিবাদ নিয়ে যে রায় তার উল্লেখ রয়েছে নয়া সংস্করণের বইতে। ওই অংশে লেখা রয়েছে, বহুধর্ম এবং বহু সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের বিবাদের ক্ষেত্রে সাধারণত আইনি পথেই সমাধান বেরোয়। আদালত যেভাবে বিতর্কিত জায়গাটি রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের হাতে তুলে দেয় এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে মসজিদ নির্মাণের জন্য অন্যত্র জায়গা বরাদ্দ করার নির্দেশ দেয়, তাতে ভারতীয় সংবিধানের সম্মান রক্ষা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সমাজের অধিকাংশ মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছে। স্পর্শকাতর একটি বিষয়কে কিভাবে দু’পক্ষের সম্মতিক্রমে গণতান্ত্রিকভাবে সমাধান করা যায়, তার ধ্রুপদী উদাহরণ হলো অযোধ্যার রায়।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ