ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসার পর ‘আত্মগোপনে’ রয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী। তিনি আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী এবং তার নামে-বেনামে রয়েছে সম্পদের পাহাড়। লায়লা ‘আত্মগোপনে’ থাকায় উপজেলা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান লায়লার কক্ষে তালা ঝুলছে। পরিষদের অন্য কর্মকর্তারা জানান, তিনি ঈদের পর থেকে আর দপ্তরে আসেননি।
কার্যালয়ের নিচে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় বৃদ্ধা ফালানি বেগমকে। তিনি জানান, দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী থেকে সকালে এসেছেন চেয়ারম্যানের একটি সইয়ের জন্য। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও তাকে পাননি। তার মতো অনেকেই সেবা নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে গেছেন।
পরিষদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও দপ্তরে আসেননি চেয়ারম্যান লায়লা। পরিষদের কোনো সভায়ও তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তারা জানান, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে দাপ্তরিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন।
গত রোববার অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা এবং সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও তিনি যোগ দেননি বলে জানা গেছে। আর এসব ঘটনায় এখন সবার মুখে প্রশ্ন তিনি কি দেশে না বিদেশে?
রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি এভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারেন না। জনগণের কাছে তার একটা দায়বদ্ধতা আছে। তা ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম আটকে থাকবে।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজ তাহমিনা মানিক জানান, গত এক বছর লায়লা কখনোই নিয়মিত অফিস করেননি, মাঝেমধ্যে আসতেন। পরিষদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় তিনি উপস্থিত থাকতেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসাইন বলেন, এটা রায়পুরার জন্য একটা দুঃখজনক অধ্যায়, লজ্জাজনক ঘটনা। স্বামীর অবৈধ টাকার প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগটাকে তিনি তছনছ করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান বলেন, রোববার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উপস্থিত থাকার জন্য জানাতে উনাকে ফোন দিয়েছিলাম, ফোন ধরেননি। পরে উনার রেফারেন্স দিয়ে পিএস বা কেউ একজন বলেছেন, উনি আজ (রোববার) অফিসে আসবেন না, কাল আসবেন।
নরসিংদীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) মৌসুমী সরকার বলেন, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতের ব্যাপারে আমরা অফিসিয়ালি কোনো কিছু জানি না। আমরা উনার কাছ থেকে ছুটির কোনো দরখাস্ত পাইনি। উনার অনুপস্থিতের কারণে পরিষদের কার্যক্রমের যদি কোনো বিঘ্ন ঘটে, সে ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এ ব্যাপারে জানতে সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া লায়লা কানিজ লাকীর ০১৩২৬-৮৪৫২৩১ নম্বরসহ একাধিক ফোন নম্বরে এবং হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।