ভারতে অনুপ্রবেশ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে কলকাতার নিউ টাউন এলাকা থেকে সিলেট আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৪ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পলাতক রয়েছেন সিলেটের আরও দুই পদধারী আওয়ামী লীগ নেতা।
গত ৮ ডিসেম্বর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ-সভাপতি রিপন ও যুবলীগের সদস্য জুয়েল।
পলাতক ২ জন হলেন— সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসার আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ৪ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হিসেবে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। তবে এ বিষয়ক তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি ঢাকা পোস্ট।
সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে মেঘালয়ের পত্রিকা দ্য শিলং টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেপ্তার চারজনকে রোববার রাতে কলকাতা থেকে পশ্চিম জৈন্তা হিল জেলার প্রধান শহর জোয়াইয়ে আনা হয়। ট্রাক চালককে মারধরের অভিযোগে ডাউকি থানায় দায়ের হওয়া মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এদিকে মেঘালয়ের দ্য শিলং টাইমসের সাংবাদিক অঘোর পরাগ সংশ্লিষ্ট থানার বরাত দিয়ে জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডাউকি থানায় গত অক্টোবর মাসে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে —মামলা নম্বর ১/২৪ ইউ/এস ১১৮(১)/৩০৯(৪)/৩১০(২)/৩২৪(৪) বিএনএস এবং ১৪ ফরেনস অ্যাক্টে— ৮ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার নিউটাউন এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ধারার কোনোটিই ধর্ষণ মামলার ধারা নয়।
যেসব ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে
ভারতীয় আইনে দেখা যায়, ১১৮(১) বিএনএস : এটি বিপজ্জনক অস্ত্র বা উপায় দ্বারা স্বেচ্ছায় ক্ষতি করার সঙ্গে সম্পর্কিত। ধারা ৩০৯(৪) বিএনএস : এটি ডাকাতির শাস্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। যদিও উপধারা (৪)-এর সুনির্দিষ্ট বিবরণ এখানে উল্লেখ করা হয়নি, সাধারণত ডাকাতির মধ্যে চুরি এবং সহিংসতার ব্যবহার বা হুমকি অন্তর্ভুক্ত থাকে। ধারা ৩১০(২) বিএনএস : এটি ডাকাতির সঙ্গে সম্পর্কিত, যা পাঁচ বা তার বেশি ব্যক্তির মাধ্যমে সংঘটিত ডাকাতি। ধারা ৩২৪(৪) বিএনএস : এটি ডাকাতি করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় ক্ষতি করার সঙ্গে সম্পর্কিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, গতকাল থেকে ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিলেটের ৪ নেতা ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে তোলপাড় হয়। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো তারা এই ধরনের কোনো মামলায় অভিযুক্ত নয়। আটক নেতারা সিলেটের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। আমাদের রাজনৈতিক মত-দ্বিমত থাকতে পারে। তাই বলে কারও বিরুদ্ধে অপপ্রচার কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ঢাকা পোস্টকে জানান, আমাদের সিলেটের চার নেতাকে অবৈধ অনুপ্রবেশসহ আরও কয়েকটি ধারায় আসামি করা হয়েছে। অথচ কোনো ধরনের তথ্য প্রমাণ কিংবা বিচার বিশ্লেষণ না করেই তাদের ধর্ষণের আসামি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটিই কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ প্রত্যেকের সামাজিক অবস্থান ও পারিবারিক অবস্থান আছে। মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় যেন কারও ক্ষতি না হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে নেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে আমরা আইনজীবী নিয়োগ করেছি। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে অচিরেই তারা মুক্তি পাবেন বলে আমি মনে করি।