22 C
Dhaka
Saturday, February 22, 2025

‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির

জুলাই -বিপ্লবের ছাত্র জনতার যৌক্তিক দাবি আদায়ের মিছিলে যায় সাব্বির। ৫ আগস্ট সরকার পদত্যাগের পর উচ্ছ্বসিত জনতার সাথে বিজয় মিছিল নিয়ে দেবিদ্বার থানা অভ্যন্তরে যান । তখন থানা থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় আমিরুল ইসলাম সাব্বির (১৮)। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৪০ দিন পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সাব্বিরের মৃত্যুতে বিধবা ‘ মা ’ রিনা আক্তার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে তাঁর জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বেঁচে থাকার স্বপ্নগুলো পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে ।

নিহত সাব্বিরের ‘মা’ রিনা আক্তার বলেন, বুকের মানিক হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল সে। হাসপাতালে মৃত্যু শয্যায় জানতে চেয়েছিলাম- বাবা কেন গিয়েছ আন্দোলন করতে, আমরা গরীব মানুষ , আমাদের আবার আন্দোলন কিসের ? ছেলে বলেছিল “ মা দেশ স্বাধীন করতে গিয়েছি, এখন আমরা স্বাধীন ”। এই ছোট কথাটুকু বলে সে চলে যায়।

আরও পড়ুনঃ  পিএসসিকে বিতর্কিত করা হলে চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে : চেয়ারম্যান

জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে আমাদের সুখ সাগরে ভাসিয়ে গেলো সাব্বির একথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিনা আক্তার।

তিনি আরো জানান, “ছেলে মৃত্যুর পর সবচেয়ে বেশি সহযোগীতা করেছেন মুরাদনগরের সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ। স্বামীর বাড়িতে থাকার মতো কোনো ঘর ছিলো না, নিহত সাব্বিরের ভিটায় কায়কোবাদ দাদা ঘর করে দিয়েছেন। হাসপাতালে দাদার লোকজন গিয়ে নানাভাবে সহযোগীতা করেছেন। এছাড়াও দাদা ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লা দিয়েছেন ২ লাখ টাকা। সাব্বিরের চিকিৎসা বাবদ সব টাকা খরচ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স সেল গঠন করল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

স্বামী নাই উপযোক্ত ছেলে নাই। আয় রোজগার বন্ধ। চলাফেরা করতে খুব কষ্ট হয়। ঘরে প্রায়ই চাল , ডাল থাকে না। প্রথম প্রথম অনেকেই খোঁজ খবর নিয়েছেন, এখন আর কেউ আসে না।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার যুগ্ন আহবায়ক কাজী নাসির বলেন, “সাব্বির শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। সে ৩ তারিখ আন্দোলন করছে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ। ৪ ও ৫ আগস্ট আন্দোলন করেন দেবিদ্বারে। ৫ আগস্ট দুপুরে সরকার পালিয়ে গেলে ছাত্রজনতা বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেন। মিছিল নিয়ে দেবিদ্বার থানার দিকে আসলে ওখানেই পুলিশ গুলিবর্ষণ করেন। মূহুর্তে বিষাদে পরিণত হয় তার উল্লাস। ৪০ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ১৪ সেপ্টেম্বর নিহত হয় সাব্বির ”।
শহীদ সাব্বিরের পরিবারকে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ২ লাখ টাকা দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ , এসময় সাথে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লার আহবায়ক সাকিব হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

আরও পড়ুনঃ  শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাকিব আহত

শহীদ কিশোর আমিরুল ইসলাম সাব্বির কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের মৃত আলমগীর হোসেনের পুত্র। সে মরিচাকান্দা জিয়া স্মৃতি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর ছাত্র ছিলো। নানার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ী গ্রামে থাকতো সাব্বির। ওখানেই তাকে মাটি দেওয়া হয়।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ