জালিয়াতি করে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে শিক্ষকতা করার অভিযোগ মো. আহসানউল্লাহর বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা সদরের বল্লী মো. মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এরইমধ্যে বেতন-ভাতা হিসেবে অবৈধভাবে প্রায় ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ২৭২ টাকা উত্তোলন করেছেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের ১৮ জন শিক্ষক -কর্মচারী। তবে কোনোপ্রকার তদন্ত না করেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে মো. আহসানউল্লাহর জালিয়াতির সব তথ্য প্রমাণ কালবেলা প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৩ সালের ৩ জুলাই আহাসানউল্লাহ বল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল শাখায় ট্রেড ইন্সট্রাক্টর হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরের বছর তিনি এমপিওভুক্ত হন এবং যথারীতি বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। পরে ২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল নিজের পদ হতে পদত্যাগ করেন আহসানুল্লাহ। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের রেজুলেশনপত্র থেকে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। একপর্যায়ে তিনি চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-০১ জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগদান করেন। যার ব্যক্তিগত আইডি নম্বর ০৯১১০৪১।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরিরত অবস্থায় ২০০৭ সালের মে, জুন, জুলাইয়ের বেতনভাতা উত্তোলন করেন। সেই বেতন গ্রহণের একটি শিট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরিরত অবস্থায় অসদাচরণ, নির্দেশ অমান্য, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাকে ২০০৭ সালের ১৩ আগস্ট চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর পুনরায় পূর্বের কর্মস্থল মো. মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় যোগদানের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন আহসানউল্লাহ।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি থেকে পদত্যাগ করায় পুনরায় চাকরিতে সংযুক্ত হওয়াটা নিয়ম বহির্ভূত। তবে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ‘যোগসাজশে’ আহসানুল্লাহ কোনোপ্রকার নিয়োগ যাচাইবাছাই ছাড়াই পূর্বের পদে বহাল হন। পরে রেজুলেশনসহ অন্যান্য বেশ কিছু কাগজপত্র জালিয়াতি করেন প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট কমিটির দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। জালিয়াতির মাধ্যমে পুনরায় বেতনভাতাও উত্তোলন করেন।
বল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক আব্দুল আলীম জানান, বল্লী স্কুলে চাকরিতে থাকা অবস্থায় নিজে পদত্যাগ করে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরি শুরু করেন আহসানউল্লাহ। পরে সেখানে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হন তিনি। ফিরে এসে বল্লী স্কুলে ফের চাকরিতে যোগদানের বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রজ্জাক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মাধ্যমে রেজুলেশনে পদত্যাগপত্রে ওভার রাইটিং করে পদত্যাগপত্রের স্থলে চিকিৎসাপত্র লেখেন তারা। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে জাল-জালিয়াতি করে তাকে চাকরিতে বহাল করেন।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। তবে দীর্ঘ এক বছর পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি।
প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য বিদায়ী অফিস সহকারী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আহসানউল্লাহ্ ২০০৭ সালে এপ্রিল মাসে পদত্যাগ করে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুতে চাকরিতে যোগ দেন। চার মাস চাকরি করে সেখানকার চাকরি হারিয়ে ভুয়া একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও তৎকালীন সভাপতির সহযোগিতায় রেজুলেশনে ওভার রাইটিং করে চাকরিতে বহাল হন। বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নেন প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি। এ বিষয়ের সমস্ত কাগজপত্র আমাদের সংগ্রহে রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সময়ে তিনি নিজেকে সরকারদলীয় লোক বলে দাবি করতেন এবং তদন্ত কার্যক্রমসহ এ সংশ্লিষ্ট কথা বললে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মো. আহসানউল্লাহ বলেন, তিনি কখনো চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুতে চাকরিরত ছিলেন না। তবে আর কোনো কথা বলতে চাননি তিনি।
বল্লী মো. মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুর রজ্জাক বলেন, রেজুলেশনে কারিগরি বিভাগের শিক্ষক মো. আহসানউল্লাহ পদত্যাগপত্রটি আমার হাতের লেখা, তবে সেখানে আমার স্বাক্ষর নেই। রেজুলেশনে কীভাবে পদত্যাগপত্রের স্থানে চিকিৎসাপত্র লেখা হয়েছে এ বিষয়টি আমার জানা নেই। হয়তো আমার অনুপস্থিতিতে কেউ কাজটি করেছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ জানান, সম্ভবত এটার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। ফাইল না দেখে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো যাচ্ছে না।