আলোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডে দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে থাকার পর বাড়ি ফিরেছেন পটুয়াখালীর বাউফলের সাবেক বিডিয়ার জওয়ান মুসা হাওলাদার। জামিনে মুক্তি পেয়েই গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) মা-বাবার বুকে ফেরেন তিনি।
মুসা হাওলাদার কনকদিয়া ইউনিয়নের উত্তর কনকদিয়া গ্রামের রহমান মাস্টার বাড়ির মফিজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। ৫ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় । দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর মুক্ত হয়ে ফিরে আসায় মুসার বাড়িতে আনন্দের জোয়ার বইছে। অসুস্থ ৯৮ বছর বয়সী বাবা ও ৮৫ বছর বয়সী মা তাকে পেয়ে মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাকে এক পলক দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন আত্মীয়-স্বজনরা ।
জানা যায়, অতিদরিদ্র ও সাধারণ পরিবারের সন্তান মুসা ১৯৮৮ সালে তৎকালীন বিডিআরে যোগ দেন। তাদের পরিবারে মুসাই একমাত্র সরকারি চাকরিজীবী ছিল। চাকরি করে ভাই-বোনদের লেখাপড়া করিয়েছেন ও পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন। ২১ বছর চাকরির মাথায় পিলখানার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কারাবন্দি হন। বিদ্রোহী, সিভিল ও বিস্ফোরক আইনে মামলায় জেল খাটেন দীর্ঘ ১৬টি বছর। মুসার স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। মুসার ভাইদের সহযোগিতায় জীবনযাপন ও লেখাপড়া করেছেন তারা। বড় ছেলে মহিউদ্দিন (২০) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানীতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করেন। ছোট ছেলে মারুফ(১৭) একটি কামিল মাদরাসায় লেখাপড়া করে।
মুসা হাওলাদার বলেন, মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে থাকার পরে পরিবারের কাছে ফেরার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বাবা ও ছেলের সঙ্গে নামাজ পড়তে পারছি। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। দুনিয়ার ভেতরে সবচেয়ে উত্তম জিনিস আমি পেয়েছি আমার বাবা-মা। আমার বাবা-মা দুজনেই বৃদ্ধ, প্রায় সময় খুবই অসুস্থ থাকেন। ঠিকঠাকভাবে হাঁটা চলা করতে পারেন না।
তিনি বলেন, আমি যখন কারাগারে যাই তখন আমার বড় ছেলের বয়স তিন বছর ও ছোট ছেলের বয়স এক বছর ছিল। আমি প্রতিটি মুহূর্তে খুব কষ্টের ভেতর ছিলাম। যখন ছেলেদের কথা মনে হতো নিজেকে সামলাতে পারতাম না। আমার ভাইয়েরা তাদের পরিচলনা করায় আল্লাহ এই অবস্থানে নিয়ে আসছে। আমার কোনো সম্পদ নেই। আমি আমার ভাইদের পেছনে শ্রম দিয়েছি। ভাইয়েরা আমার সন্তানদের মানুষ করেছে। আমি আমার ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞ ।
মুসা হাওলাদার বলেন, আমার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নাই যে নিজে চলতে পারব। পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনা এই সরকার জানছে, দেশবাসী ও বিশ্ব জানতে পেরেছে কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে। আমার ওপর অন্যায়ভাবে দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার দিন আমার ডিউটি ছিল না। আমি আশা করি আমার হক আমি ফিরে পাব।
ছাত্রসমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ছাত্রসমাজ যদি এগিয়ে না আসতো তাহলে আমরা কারামুক্ত হতে পারতাম না। আমাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। জীবন থেকে ১৬টি বছর অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়েছে। বাবা-মায়ের খেদমত করতে পারিনি, স্ত্রী-সন্তানদের পাশে থাকতে পারিনি। জেলখানায় এখনো নির্দোষ বিডিআরের সদস্য রয়েছেন। আমি তাদের মুক্তির দাবি জানাই।
মুসা হাওলাদারের ছোট ছেলে মারুফ বলেন, জন্মের পর থেকে বাবাকে কাছে পাইনি। বাবার আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। এই প্রথম বাবার কাছে থাকার সুযোগ হয়েছে। স্কুলে যখন সহপাঠীদের বাবারা যেত তখন বাবা না থাকার অভাব বুঝেছি। বাবা এখন আমার কাছে ফিরে এসেছে এটাই বড় পাওয়া। বাবার সঙ্গে নামাজ আদায় করতেছি আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।
মুসার ছোট ভাই বশির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমার ভাইয়ের ওপর জুলুম হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ষড়যন্তের শিকার আমার ভাই। এলাকায় মানুষের কাছ থেকে অনেক কথা শুনেছি। লোকজন বলেছে অনেক বড় ধরনের অন্যায় করেছে এজন্য এখনো ছাড়া পায়রি। আমরা একটা মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে ছিলাম, তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমার ভাই ফিরে আশায় আমরা অনেক খুশি।