22 C
Dhaka
Wednesday, February 19, 2025

বিচারকের গাড়িতে সালাম না দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টদের কান ধরে উঠবস করান মানিক

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক প্রায় দুই দশক ধরে নানা কারণে দেশে বেশ আলোচিত ও সমালোচিত। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে নারী উপস্থাপিকার সঙ্গে বাজে আচরণ করে আবার আলোচনায় আসেন। ওই অনুষ্ঠানে নারী উপস্থাপিকাকে রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন করেন।

এ ছাড়া যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল বা সংস্কার চায় সেসব শিক্ষার্থীরাও রাজাকারের বাচ্চা বলে মন্তব্য করেন এই সাবেক বিচারপতি।

জানা যায়, চৌধুরী মানিক ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন জীবন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন। এরপর ২০০১ আওয়ামী লীগ সরকার তাকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাইকোর্টে নিয়োগ দেন। তবে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসা বিএনপি তার নিয়োগের বিষয়টি সমর্থন করেনি। ২০০৩ সালে ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তার গাড়ি দেখেও স্যালুট না করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ করেছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকার হাইকোর্টে একজন পূর্ণ বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয় চৌধুরী মানিককে।

আরও পড়ুনঃ  আ. লীগকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিলে করা রিটের শুনানি রোববার
সম্প্রতি চ্যানেল আইতে আয়োজিত টু দ্য পয়েন্ট টকশোতে। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
সম্প্রতি চ্যানেল আইতে আয়োজিত টু দ্য পয়েন্ট টকশোতে। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

পরবর্তীতে মানিকের বিরুদ্ধে নবম সংসদে নিন্দা এবং সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। আওয়ামী লীগের নেতা, তোফায়েল আহমেদ, তাকে একজন দুঃখবাদী বলে অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে মানিক ট্রাফিক সার্জেন্টদের হাইকোর্টের বিচারকের গাড়িকে সালাম না দেওয়ার কারণে আদালতে কান ধরে উঠবস করিয়েছিলেন। মানিক তার অবস্থানের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিমানে ইকোনমি শ্রেণির টিকিট কিনে জোরপূর্বক ব্যবসায়িক শ্রেণির আসনে বসে থাকার অভিযোগও করেন তিনি।

২০১৩ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পদোন্নতি পান। তিনি তার চেয়ে সিনিয়র ২১ জন বিচারককে অতিক্রম করে এ পদোন্নতি পান। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান তার অপসারণের দাবি জানান।

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রদল পরিচয়ে যুবলীগ কর্মীদের চাঁদা আদায়, গ্রেপ্তার ৩

২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে তাকে বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই আরও বেশি বিতর্কে জড়ান এই বিচারপতি। তিনি অবসরে যাওয়ার সময় তখনকার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সঙ্গে তার একটি গোপন কথোপকথন রেকর্ড করেন এবং কথোপকথনটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এর জের ধরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মানিককে বিদায় সংবর্ধনা দেয়নি। এমনকি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসও তার জন্য বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। অথচ অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র বিচারকদের জন্য বিদায় অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য রয়েছে। এ ছাড়া বার অ্যাসোসিয়েশন মানিকের বিরুদ্ধে রায়ে স্বাক্ষর না করাসহ ১৪ জন আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ করেছিল।

আরও পড়ুনঃ  কাঠগড়ায় শাজাহান খানকে চেয়ার দেওয়া নিয়ে হট্টগোল

এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বিচারপতি মানিককে বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে প্রধান বিচারপতির অভিশংসনের আবেদন করে বিতর্কিত হন।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ডনা এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বিজিবি মানিককে আটক করে। ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ডনা এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বিজিবি মানিককে আটক করে। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি সরকারি বাড়ির ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগে বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে দুদককে নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। একটি গণমাধ্যমের সংবাদকে উদ্ধৃত করে নোটিশে উল্লেখ করা হয়, অবসরে যাওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় রাজধানীর গুলশানে একটি সরকারি বাড়ি দখলে রেখেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

সবশেষ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর শুক্রবার (২৩ আগস্ট) তিনি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ডনা এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভারতে যাওয়ার প্রাক্কালে বিজিবির একটি টহল দল সীমান্তে তাকে আটক করে।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ