বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, এদেশে ইসলাম এসেছে সুফিদের মাধ্যমে। আল্লাহর ওলি আউলিয়াদের হাত ধরে। আল্লাহর ওলিদের সংস্পর্শে এসে লাখ লাখ মানুষ ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে। অথচ আজ আমাদের দেশে মাজার ভাঙ্গা হচ্ছে। একটা দল আছে যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে। কমিউনিস্টের গঠনতন্ত্র আর তাদের গঠনতন্ত্রের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কমিউনিস্টরা সমাজতন্ত্রে কথা বলে আর এই জামায়াতে ইসলামী ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করে। এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
রাজধানীর মহাখালীর গাউসুল আজম জামে মসজিদে আজ বৃহস্পতিবার উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ মরহুম আলহাজ্ব হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর ১৯তম ওফাত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ইসালে সাওয়াল ও দোয়া মাহফিলে তিনি বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
বরকত উল্লা বুলু বলেন, জামায়াত এখন ধর্মকে তাদের রাজনীতির বড় হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। গ্রামে গ্রামে বলে বেড়াচ্ছে তাদের আমীরকে দেখলে, আমীরের কথা শুনলে বেহেশতে যাওয়া যাবে (নাউজুবিল্লাহ)। মহিলাদের বলছে বলছে জামায়াতকে ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া যাবে। তারা এখন বেহেশতের টিকিট বিক্রি করছে। দেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে এখনো আওয়ামী প্রেতাত্মারা বসে আছে। তাদেরকে এই জামায়াতে ইসলামী সমর্থন দিচ্ছে। দেশের আলেম ওলামারাই ইসলামের ঝাÐা ধরে রেখেছেন কোন ব্রাদার হুডজাতীয় ধর্মব্যবসায়ীরা নয়। আমাদের আগামী প্রজন্মকে ধর্মীয় অনুশীলনের মাধ্যমে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান এদেশের সংবিধানে সর্বপ্রথম বিসমিল্লাহ সংযোজন করেছেন। আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা সংবিধানে সংযোজন করেছেন। সংবিধানের এই এই পঞ্চম সংশোধনীর প্রস্তাব সে সংসদে পাস হয়েছে তার সদস্য ছিলেন ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট আলেম হযরত মাওলানা এম এ মান্নান। তিনি এদেশের ইসলামের প্রচার প্রসারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখে গেছেন।
বিএনপির এই নেতা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, সাতচল্লিশের ধারাবাহিকতায় একাত্তর এসেছে। সেই সাতচল্লিশে আমরা পূর্ব পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন হতো না। এদেশ এখনো ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে থাকতো।
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, শেখ মুজিব ক্ষমতায় এসে রক্ষিবাহিনী গঠন করে এদেশে খুন-হত্যার রাজনীতি শুরু করে। দেশের সেনাবাহিনীকে উপেক্ষা করে রক্ষিবাহিনীকে দেওয়া হয় ব্যাপক ক্ষমতা। দেশে সেই ১৯৭৪ সালে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ চলে। মানুষ না খেয়ে মারা যায়, বাসন্তিরা জাল পরে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করে। আর রক্ষিবাহিনী তখন সারাদেশে তাদের ত্রাস ছড়িয়ে বেড়ায়। সিরাজ শিকদারকে হত্যা করে শেখ মুজিব তখন হুংকার দিয়ে বলেছিলো ‘কোথায় সিরাজ শিকদার’। এমন এখন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে। শেখ মুজিব শুধু দেশে অরাজকতাই জন্ম দেয়নি, সে ভারতের সাথে যে ২৫ বছরে মৈত্রী চুক্তি করেছিল তা ছিল প্রকারান্তরে গোলামী চুক্তি। ভারত পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ ছাড়ার কথা বলে আজও সেটা চালু রেখেছে। এই বাঁধ দিয়ে আমাদের দেশের নদীগুলোকে হত্যা করছে। ভারতের এই আধিপত্যবাদের দোসর ছিল শেখ মুজিব। পনের আগস্টের পর জাতি সেই আধিপত্যবাদের চক্রান্ত থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
তিনি বলেন, সাত নভেম্বরের বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশে নতুন করে ইসলামী জাতীয়তাবাদের জন্ম দেন। তিনি এদেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহ, আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সংযোজন করেছেন। এদেশের আলেম-ওলামাদের সাথে তার ছিল গভীর সম্পর্ক। বর্তমানেও আমরা আলেম-ওলামাদের সাথে আমাদের সম্পর্ককে জোরদার করছি। ইতোমধ্যে আমরা ইসলামী আন্দোলনের সাথে দশ দফা চুক্তি করেছি। যাতে আছে আমরা ক্ষমতায় গেলে ইসলাম বিরোধী কোন আইন করবো না। এ ছাড়া আমরা ইসলাম বিরোধী কোন কথা বলবোনা। আমরা অন্যান্য দলের সাথেও যোগাযোগ করছি। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এ সম্পর্কও আরও গভীর হবে, ইনশাঅল্লাহ।
জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা সাব্বির আহমদ মোতাজীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা ওবায়েদুর রহমান খান নদভী, ড. মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম আজহারী। জমিয়াত কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা আ ন ম মাহবুবুর রহমান জৈনপুরী (ঢাকা), এ কে এম মাহবুবুর রহমান (চাঁদপুর), মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক (ঢাকা), আলহাজ মাও.আ,খ,ম,আবুবক্কর সিদ্দিক (ঢাকা), মাওলানা মোহাম্মদ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম (ভোলা), মুফতী মাওলানা এজহারুল হক (ঢাকা), মাওলানা আবু জাফর মোঃ সাদেক হাসান (ঢাকা), ড. মাওলানা ইদ্রিস খান (ময়মনসিংহ), ড. মাওলানা মো. আবুবকর সিদ্দিক (বরিশাল), মাওলানা মো. জহিরুল হক (গাজীপুর), আ ন ম বোরহান উদ্দিন (নারায়নগঞ্জ), মাওলানা মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ (নারায়নগঞ্জ), মো. আবু রায়হান ভূইঞা (নরসিংদী), মাওলানা মো. মাসুদ আলম (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা মো. রাকিবুল হাসান (গাজীপুর), মাওলানা ফারুক আহমদ মোমতাজী (গাজীপুর), মাওলানা আবুরাফে মো. ফেরদাউস (মাদারীপুর), মাওলানা মো. মিজানুর রহমান (শরিয়তপুর), মাওলানা মীর মোশাররফ মোহাম্মদ মোস্তফা (নোয়াখালী), মাওলানা মো. জাহিদুল ইসলাম (টাঙ্গাইল), মাওলানা মিজানুর রহমান ফরিদী (ময়মনসিংহ), শাহ্ মো. সাইফুল্লাহ (বরিশাল), মাওলানা মাহবুবুর রহমান (ঝালকাঠী), মাওলানা রুহুল আমীন আফসারী (পিরোজপুর), মাওলানা বাহারুল ইসলাম (ঝিনাইদাহ), মাওলানা নূরুল আফছার ফারুকী (ফেনী), মাওলানা এম টি এম মোস্তফা হামিদী (চাঁদপুর), মাওলানা শাহাদত হোসাইন (কক্সবাজার) প্রমুখ।