21 C
Dhaka
Wednesday, February 19, 2025

ক্রিস্টিনের সঙ্গে আমার তিন বছর আগে বিচ্ছেদ হয়েছে: জয়

‘ক্রিস্টিন এবং আমি আর একসঙ্গে নেই। আমরা প্রায় তিন বছর আগে আলাদা হয়েছি।’

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে এ কথা জানান দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এর একটি রিপোর্ট ফাঁস করা হয়। জয় দাবি করেন, রিপোর্টটি ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ভরা। এফবিআইয়ের অসাবধানতা ও বোকামির কারণে রিপোর্টটির মিথ্যা প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রিপোর্টে কয়েকটি গুরুতর ভুল রয়েছে বলেও জানান জয়।

তদন্তে ম্যাসাচুসেটস ও ভার্জিনিয়ায় স্ত্রী ক্রিস্টিন এবং জয়ের ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক ব্যাংক কার্যক্রমের তথ্য পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। সে তথ্যের ভুল ধরাতে গিয়ে জয় জানান, ‘ক্রিস্টিন এবং আমি আর একসঙ্গে নেই। আমরা প্রায় তিন বছর আগে আলাদা হয়েছি।’

এফবিআইয়ের তদন্তে জানা গেছে, হাসিনা ও জয় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে ৩০ কোটি ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) পাচার করেছেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটি দাবি করেছে, তারা জয়ের আর্থিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অনিয়ম উদঘাটন করেছে।

আরও পড়ুনঃ  সুশান্ত পাল পোস্ট করে কি চাকরি হারাবেন : রাশেদ খাঁন

এফবিআইয়ের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। এফবিআই বলেছে, তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাই এবং যে কোনো সম্ভাব্য অবৈধ কার্যক্রম মোকাবিলায় সহযোগিতা করার জন্য দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল মার্কিন বিচার বিভাগের অপরাধ বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে এফবিআইয়ের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এফবিআইয়ের প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি দুদক হাতে পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এফবিআই জয়ের মালিকানাধীন ৮টি বিলাসবহুল গাড়ি পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে – ম্যাকলারেন ৭২০এস (মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার ৫৭৮ ডলার), মার্সিডিজ বেঞ্জ এএমজি জিটি (মূল্য ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৬ ডলার), মার্সিডিজ বেঞ্জ এস-ক্লাস (মূল্য ৫১ হাজার ৮ ডলার), এসএল শ্রেণির মার্সিডিজ বেঞ্জ (৭৩ হাজার ৫৭০ ডলার), লেক্সাস জিএক্স ৪৬০ (মূল্য ৩০ হাজার ১৮২ ডলার), রেঞ্জ রোভার (৩৭ হাজার ৫৮৬ ডলার), জিপ গ্র্যান্ড চেরোকি (৭ হাজার ৪৯১ ডলার) এবং গ্র্যান্ড চেরোকি (৪ হাজার ৪৭৭ ডলার)। তবে জয় দাবি করেন, এসব গাড়ি অনেক পুরোনো এবং অধিকাংশই বহু আগে বিক্রি হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  সেইফ গেম প্লে না করতে পারাটা হাসনাতের বড় সমস্যা : সারজিস

এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা হংকং ও কেম্যান আইল্যান্ডে সজীবের ব্যাংক হিসাব খুঁজে পেয়েছে। স্থানীয় একটি মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও লন্ডনে সন্দেহজনক অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি জানা যায়।

জয়ের সন্দেহজনক কার্যকলাপ খতিয়ে দেখতে এফবিআই যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অনুসন্ধানগুলো সম্ভাব্য অবৈধ ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন।

এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোটের সঙ্গে মার্কিন বিচার বিভাগের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলসের যোগাযোগ হয়। তিনি বাংলাদেশ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার চুরি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচার সংক্রান্ত একটি মামলায় ওয়াশিংটন ফিল্ডের সহায়তা চেয়েছিলেন। তবে ফেসবুক পোস্টে সজীব ওয়েজদ জয় দাবি করেন, রিপোর্টে যে এফবিআই এজেন্টের কথা বলা হয়েছে তিনি বহু বছর আগেই সংস্থা থেকে অবসর নিয়েছেন। যে বিচার বিভাগের যে আইনজীবীর কথা বলা হয়েছে, তিনি ২০১৩ সালে মারা গেছেন। তার মৃত্যু সংবাদের খবরের লিংক শেয়ার করেন জয়।

আরও পড়ুনঃ  চট্টগ্রাম নিয়ে ‘রিপাবলিক বাংলা’র বিতর্কিত প্রতিবেদন, নিন্দার ঝড়

হাসিনা ও সজীব সজীব যুক্তরাষ্ট্র ও কেম্যান আইল্যান্ডে অর্থ পাচার করেছেন উল্লেখ করে এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগের সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ বা মানি লন্ডারিং বিভাগ এসব তহবিল খুঁজে বের করতে, সংযত করতে, জব্দ করতে ওয়াশিংটন ফিল্ডের সহায়তা চেয়েছিল। আমাদের তদন্তে ওয়াজেদ কনসাল্টিং ইনকর্পোরেটেড নামে সন্দেহজনক কার্যকলাপও পাওয়া গেছে। ওয়াজেদ কনসালট্যান্ট বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অসংখ্য ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল এবং বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্পের যুক্ত ছিল।

তবে জয় দাবি করছেন, তার কোনো অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তিনি এই শাসন ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করে দেখাতে বলেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব আর্থিক লেনদেনের বৈধতা নির্ধারণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই ও তদন্তের দাবি রাখে।

এফবিআইয়ের প্রতিবেদনে তাদের গোপন তথ্যদাতা জয়ের দুই সহযোগীর নামও জানিয়েছেন- যুক্তরাষ্ট্র মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী। গোয়েন্দা সংস্থাটি ওয়াজেদ কনসাল্টিং, ইকম সিস্টেমস, এমভিয়ন ও ইন্টেলিজেন্ট ট্রেড সিস্টেমস লিমিটেডসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে সজীবের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ