29 C
Dhaka
Saturday, February 22, 2025

বল্লামুখা বাঁধ নির্মাণে বিএসএফের বাধা, কাজ চালু রাখার সিদ্ধান্ত বিজিবির

২০২৪ সালের আগস্টে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ফেনীর পরশুরাম সীমান্তের বল্লামুখা বাঁধ পুননির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিজিবির পাহারায় নির্মাণ কাজ শুরু হলেও বাধা দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে কাজ চলমান রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে বাঁধ নির্মাণে অংশ নিয়ে কাজ চালু রেখেছে স্থানীয়রা।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক সীমান্তের আইনানুযায়ী শূন্যরেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুননির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিএসএফ কাজে বাধা দেয়। তবে সেই বাধা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যেতে ঠিকাদারদের নির্দেশ দিয়েছে বিজিবি। এতে চলমান রয়েছে নির্মাণ কাজ।

স্থানীয়রা জানান, বল্লামুখা বেড়িবাঁধে ১৯০ মিটারের কাজে বিএসএফ বাধা প্রদান না করলেও অপর অংশের ৭০ মিটার বাঁধ পুননির্মাণে বাঁধা প্রদান করে। ৭০ মিটার বাঁধের অংশে ৩০ মিটার দু-দেশের সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বলে ভারতীয় বিএসএফ এমন অভিযোগ করে বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণে বাঁধা প্রদান করে।

এর আগে গেল বছরের আগস্টে পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের শূন্যরেখায় বল্লামুখার ভারতীয় অংশের বাঁধ কেটে দিয়েছিল বিএসএফ।এতে পানি প্রবেশ করে গত বছরের আগস্টে ফেনীতে হয় ভয়াবহ বন্যা। সেই বাঁধ পুননির্মাণ শুরু হলে আবার সেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সেইফ গেম প্লে না করতে পারাটা হাসনাতের বড় সমস্যা : সারজিস

স্থানীয়রা জানান, গত আগস্টে ফেনীর পরশুরামের মুহুরী নদীর উজানে ভারতের ত্রিপুরায় পাহাড়ি ঢলে বিলোনীয়া শহর প্লাবিত হয়। একপর্যায়ে তাদের শহর রক্ষায় বিএসএফের সহায়তায় ভারতীয় নাগরিকরা ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট রাতে মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর সীমান্তের শূন্যরেখায় বল্লামুখার বাঁধের বাংলাদেশ অংশ কেটে দেয়ার চেষ্টা করে। তবে বিজিবি ও স্থানীয়দের বাধার মুখে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সে সময় বিএসএফের পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগও রয়েছে স্থানীয়দের।

তারা বলেন, বাংলাদেশের বাঁধ কাটতে ব‍্যর্থ হয়ে পরে বাঁধের তাদের অংশ কেটে দেয়ার ফলে পানির চাপে বল্লামুখাসহ বাংলাদেশ অংশের নদী তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শতাধিক স্থান ভেঙে তলিয়ে যায় ফেনীসহ পার্শ্ববর্তী জেলার কয়েক লাখ পরিবারের ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দৈর্ঘ্য ১২২ কিলোমিটার। গত আগস্টে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর দুই তীরের ১২২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০২টি স্থানে ভেঙে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল। যার মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন হয় ৯৬টি ভাঙা অংশের। এতে ব‍্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ ছাড়াও মেরামত কাজ চলমান রয়েছে বল্লামুখার দুটি স্থানে। আর বাঁধের সেসব ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে সরকারের ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আরও পড়ুনঃ  অনুমোদন ছিল ২৪২০ টনের, ভারতে ইলিশ গেল ৫৩৩ মেট্রিক টন

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ নির্মাণে ভারতীয় বিএসএফের এমন আচারনে হতবাক স্থানীয়রা। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ না হলে আসছে বর্ষায় আবারও ফেনী অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার শংকা তাদের। নির্বিঘ্নে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।

ঠিকাদারের প্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দা কালা মিয়া বলেন, নির্মাণ কাজ যখন চলছিল তখন বিএসএফের সদস্যরা পতাকা নিয়ে এসে তিনদিন কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলে। তবে বিজিবি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে কাজ চলমান থাকবে। আইন মেনে ভারত থেকে দেড়শ গজ বাহিরে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। বিএসএফ বাঁধা দিলেও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

মুজাহিদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বিএসএফ অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছে। কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ বাঁধ নির্মাণ না হলে আগামী বর্ষায় আবার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এসময় তারা বিজিবির সাহসী সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন এবং বিএসএফের আচারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুনঃ  কেন দেশে ফিরতে পারছেন না পিনাকি ভট্টাচার্য?

এম এ হাসান নামে স্থানীয় এক গণমাধ্যম কর্মী বলেন, বন্যা থেকে ফেনীকে বাঁচাতে টেকসই বাঁধের বিকল্প নেই। যতই বাধা আসুক এ বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে সাহসী সিদ্ধান্তে অটুট থাকতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, বল্লামুখা বাঁধ নোম্যান্সল্যান্ডের মধ্যে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বিষয়ে বাধা আসতে পারে আশংকা করে আগেই বিজিবি-৪ ব্যাটেলিয়ন, কুমিল্লা সেক্টর ও যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্য আলাপ করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। যথা সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

ইতোমধ্যে বাঁধের বিষয়ে ভারতের ঈশানচন্দ্র নগর ও বাংলাদেশের নিজ কালিকাপুর ক্যাম্পের বিজিবি- বিএসএফ’র মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ বিষয়ে বিজিবি’র ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মোশারফ হোসেন জানান, দেড়শ গজের বাইরের অংশে বাঁধ পুননির্মাণের কাজ চলছে, ৩০ মিটার জায়গায় আপত্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

সর্বশেষ সংবাদ
জনপ্রিয় সংবাদ